রাত তখন ১০টা, ছাদে উঠে সিগারেটটা ধরাতেই দেখি হটাৎ বৃষ্টি চালু হয়ে গেল। চাদ থেকে নিচে নেমে আসি তাড়াতাড়ি আর ঘরে এসে সিগারেটটা শেষ করলাম, শেষ অংসটিকে জানালা দিয়ে ফেলতে যাচ্ছি তখনি হটাৎ দেখি সামনের বাড়িটার নিচে একটা বয়স্ক মহিলা বসে। তাড়াতাড়ি জানালাটা বন্ধ করে ছাতাটা নিয়ে নিচে গেলাম। নীচে গিয়ে দেখি সেই বুড়ি মানুষটি এক হাতে ছাতা নিয়ে আরেক হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে মাথা প্লাষ্টিক ব্যাগ চাপা দিয়ে বসে আছে। জিজ্ঞেস করলাম "ঠাকুমা এখানে এরম ভাবে বসে আছো বৃষ্টির মধ্যে, বাড়ি চলে যাও", সে প্রতিউত্তরে বললো "না বাবা আমাকে এখানে বসতেই হবে, কিছুদিন ধরে এখানে আসছিলাম ভ্যাকসিন দিতে কিন্তু রোজ দেরি হয়ে যেত বলে আর আমার চান্স আসতোনা, তাই আজকে সবার আগে আমি লাইনে আছি, এবার োর আমায় আর মণ করতে পড়বেনা, কালকে ওদের আমাকে ভ্যাকসিন দিতেই হবে"। আমি এতটা শুনে বললাম "ঠাকুমা বৃষ্টি কিন্তু অনেক হচ্ছে তুমি সেরম হলে আমার বাড়িতে আসো তারপর বৃষ্টি থিম গেলে না হয় আবার লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ো", আমার সব কথা শুনে সে একবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো আর বললো "ধন্যবাদ বাবা কিন্তু আমি যাবোনা, আমি এখানে একদম ভালো আছি, আমার গায়ে জল লাগছেনা, আর আমি একদম ফিট আছি তাই আমার কোনো কষ্ট হচ্ছেনা, আর বৃষ্টি একটু পরেই থেমে যাবে, আর একবার যদি আমার লাইনটা চলে যাই তারপর আর জনিনা আবার আস্তে পারবো কিনা আর এলেও ভ্যাকসিন পাবো কিনা"। আমি খালি তাকে আমার বাড়িটা দেখিয়ে দিয়ে একবার বলে দিলাম যদি কোনো দরকার পরে আমায় যেন সে ডেকে নেয়, এই বলে আমি চলে এলাম।
রাতে একবার ঘুম ভাঙলো ওই 3AM এ , মাথায় সেই ঠাকুমার কোথায় ঘুরছিলো, বারান্দায় বেরিয়ে এসে দেখি যে বৃষ্টি থেমে গেছে আর বাইরে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য লাইনে বেশ ভালোই পড়েছে, আমি একজনকে ডেকে বললাম , "দাদা বলছি ওই বাড়ির সিঁড়িতে একজন বয়স্ক মহিলা বসে ছিলেন সে কি এখনো ওখানে আছে বসে?", সে বললেন "না দাদা ওখানে উনি তো বসে নেয়, উনি সামনের ওই চায়ের দোকানে চা খেতে গেলো, ঠাকুমাকে আমিও কিছুদিন ধরে দেখেছি ফায়ার যেতে, আসলে উনি আমার পাড়াতেই থাকেন, আজকে একদিন সবার আগে ভ্যাকসিন উনিই পাবেন ", আমি শুনে একটু হেসে আবার শুতে চলে এলাম।
সকালে হাটতে বেরিয়ে দেখি ঠাকুমা বসে আছে আর এখন তো লাইনে মোটামোটি ১০০ জনের বেশি লোক দাঁড়িয়ে। ঠাকুমা আমায় দেখে বললো "দেখলে বাবা কাল যদি তখন চলে গিয়ে সকালে আসতাম তাহলে আজও আমার আর হতোনা ", আমি বললাম "হ্যা ঠাকুমা ঠিকই বলেছো", বলে আমি চলে গেলাম।
আমরা এই জেনারেশনএর এর লোকেরা অর্ধেক এখনো ভ্যাকসিন নিতেই ভয় পাচ্ছে আর এই ঠাকুমার ৭৫ বয়সেও ভ্যাকসিন নিয়ে বেঁচে থাকার উৎসাহ দেখে সত্যি অনেক শেখার আছে, সুধে তিনি কেন , তার মতো আরো কত মানুষ আছে ওরম।
দুদিন কেটে গেলো আর সত্যি বলতে ভ্যাকসিন এর জন্য লাইনেওযেন লোক বাড়তেই থাকলো, এমনিও রোগ টা আবার যে রকম ছড়াচ্ছে তাতে লোকে আরো ভয় পেয়ে আছে। সেদিন সন্ধে বেলায় একটা বন্ধুর সাথে দেখা করতে কাজের পরে একটু বাইরে বেরিয়েছিলাম, আড্ডা দিতে দিতে হটাৎ দেখি পাশ দিয়ে শেষ কৃত করার গাড়িটা গেলো আর তার পেছনে ৪-৫ টা লোক, আমার গাড়ির ভেতরে হালকা নজর পড়লো আর তারপর কিছুদিন আগের সেই ঠাকুমাটির কথা মনে পড়লো, পেছনে সেই আগের দিনের লোকটা, জিজ্ঞেস করতে বললো যে সেই ঠাকুমাইমারা গেছেন আজকে বিকেলে। সেইদিন ভ্যাকসিন নিয়ে আসার পর থেকেই জোর হয়েছিল আর আজকে বাড়িতে নাকি কথা কাটা কাটি হয়েছে তো বিকেলে হার্ট এটাক করেছিল। আমিই তো শুনে পুরো স্তম্ভিত হয়ে গেলাম, মানে একটা মানুষ যে কিছুদিন আগে অব্দিও বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছিলো, ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য মারামারি করছিলো CORONA কে হারানোর জন্য লড়াই করছিলো আর আজকে সেই মানুষটা এরম ভাবে চলে গেল।
জীবনে শুধু CORONA কেই হারালে চলবে না আমাদের এই সময়ে আসলে যদি সত্যি করে কাউকে হারাতে হয় সেটা আমাদের নিজেদর পুরোনো জীবনটাকে হারাতে হবে। আগের মতো জীবন যাপন করলে হবে না , আগের মতো ভুল ভাল খেলে হবেনা, আর তারও আগে আমাদের খুশি থাকাটা শিখতে হবে , সব কিছুর মধ্যে যা পাচ্ছ তাতেই খুশি থাকতে হবে কারণ হয়তো CORONA কে আমরা হারিয়ে ফেলবো কিন্তু ওর থেকে যে বোরো লড়াই আমাদের MENTAL HEALTH সেটাকে ভালো না রাখতে পারলে আর নিজেদর জীবন যাপন সুস্থ না করলে কোনো ভ্যাকসিন আমাদের বাঁচাতে পারবে না।