কিছু সম্পর্ক
জীবনে আমরা অনেককেই ভালোবাসি, অনেককেই ভালো ও লাগে, জানিনা এটা কি কিন্তু এটা ঠিক ভালোবাসা ও নয় আবার ভালোলাগা ও নয়। ভালোবাসা শব্দটা এতটাই সহজ নয়, তার মানে শুধুমাত্র একসাথে থাকা আর শারীরিক সম্পর্কে থাকা আর একসাথে পার্টি করা এটাই নয়। ভালোবাসার সাথে সাথে অনেক দায়িত্ব আসে, সোজা কথায় এই শব্দটার মধ্যেই একটা কেমন দায়িত্ববোধ আছে। যাই হোক এখন তো মনে হয় ভালোবাসা আর ভালোলাগা সব একই হয়ে গেছে।
জানি অনেক জ্ঞান দিয়ে ফেললাম এমন একটা ব্যাপারে !!!
যাই হোক।
এটা আমারই গল্প, আমার নাম প্রবাহ, জানি নামটা একটু old fashioned কিন্তু আমার নিজের নামটা বেশ ভালই লাগে। আমার বয়স ৩০, একটি বেসরকারি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি তে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর কাজ করি, ইনকাম ভালোই হয়, নিজের ফ্যামিলি বলতে কেউ নেই তেমন। নিজের বলতে এক দিদি আছে কিন্তু সেও অনেক দূরে থাকে।
আজকে রাতে কোনো জানি না সবার আগে শাহরুখ খান এর mohabaatein দেখলাম আর পুরোনো অনেক কথাই মনে পরে গেলো তাই মনে হয় এতো রাতে এইসব লিখতে বসলাম।
সবার কলেজ জীবনটা খুব ভালোই যাই, আর আমার ও তেমনই গিয়েছিলো, আমার ব্যাচের মধ্যে খুব একটা পপুলার না হলেও লোকজন আমায় চিনতো মোটামোটি।
তো আমি যখন লিখছি কলেজ জীবন নিয়েই তাই ওই মনোভাব নিয়েই লিখি।
আমার নাম তো আগেই বলেছিলাম, আর যখনকার কথা বলতে চলেছি তখন আমার বয়েস ছিল ২০, আমি একটা বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ পড়ি আর ইচ্ছে আছে একটা ভালো চাকরি নিয়েই কলেজ থেকে বেরোনো, কিন্তু এখনকার যা অবস্থা মনে তো হয়না সেটা অডিও হবে নাকি না, যাই হোক সেটা সময় এলেই দেখা যাবে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্তমান সময় তাকে কেন খারাপ করতে যাবো।
কলেজের জীবন তা খুব ভালোই চলো, বন্ধু প্রচুর, বান্ধবীও প্রচুর, কিন্তু এতো অপশন থাকতেও আমি এখনো সিঙ্গেল ই আছি আর তার কারণ আমি একটাই মনে করি আর সেটা হলো, কেন জানি মেয়েরা আমার সাথে দারুন ভাবে মিশে যায় কিন্তু শেষ মেশ আমায় ভাই বা ফ্রেইন্ডজোনেদ করে চলে যায় আর তাদের দশ দেওয়া যায়না কারণ সবার ই হিরে পছন্দ হয় আর কারুর ই কয়লা চলে না, আর তার মধ্যে আমায় দেখতেও below average তো সেটাও একটা কারণ, আবার এক দিকে বন্ধুদের রেলশনশিপ এর যন্ত্রনা দেখে নিজেও র তেমন সুযোগ খুঁজতে চাইনি।
অনেকটাই ভাটালাম আমার ব্যাপার নিয়ে, এবার আসি আমার খুব কাছের দুই বন্ধুদের ব্যাপারে। একজনের নাম রিমা আরেকটির দিশা। ছোট থেকেই আমার বন্ধু বলতে সব ছেলেই ছিল আর স্কুল এও বলতে গেলে তাই, সেখানে কলেজ এসেও ব্যাপার তা ওরম ই চলো আর তারপর আস্তে আস্তে অনেক মেয়ে বন্ধুও হলো কিন্তু যদি আমার খুব কাছের কোনো কেউ থাকে টু সেটা এঁরা দুজন। এদের সাথে কথা বলে একটা অন্য রকমের লাগতো, এঁরা আসলে আমার কাছে শুধুমাত্র বন্ধু থেকে অনেক বেশি কিছুই ছিল। সারাক্ষন আমরা তিনজন একসাথে নাই বা থাকতাম কিন্তু দিনের শেষে একটা ছোট আড্ডা আর তারপর হোয়াটসআপ এ তো যেন সারাক্ষণই কথা বলতাম তিনজনে, আমাদের তাও কোনো গ্রুপ বলে ব্যাপার টা ছিলোনা তাও আমাদের সম্পর্কটা একটু স্পেশাল ই ছিল। বাকিরা আমাদের ব্যাপারে অনেক কিছুই ভাবতো কিন্তু আমাদের তাতে কিছু যায় আস্তনা। আর ওদের দুজনেরই বয়ফ্রেইন্ড দেড় আমাকে নিয়ে কোনো প্রব্লেম ছিলোনা আর এটা দেখে আমার খুব ভালো লাগতো।
জীবনটা খুব ভালোই যাচ্ছিলো কিন্তু যেমন সব থ্রিলার এর শেষে একটা ক্লাইম্যাক্স হয় আর সেখানে সব জিনিস উল্টে পাল্টে যায় আমার সাথেও ঠিক ওরমই একটা কিছু হলো।
তারিখ টা ছিল ২৯শে জুলাই ২০০৯, সেদিনটা আমার কাছে খুব স্পেশাল হয়ে আছে আজও।
১৫ই জুন ২০০৯, সেই দিন আমাদের 3rd ইয়ার এর পরীক্ষা শেষ হলো, তো আমরা তখন একটা প্ল্যান করলাম যে আমরা সব বন্ধুরা মিলে আজ একজনের বাড়িতে সারা রাত থাকবো আর পার্টি করবো। সবাইকে বলা হলো আর একজনের বাড়িও ঠিক হয়ে গেলো, আমি সবাইকে বলে দিলাম যে যে যার বাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি যেন আবিরের বাড়িতে চলে আসে। আমরা সব ছেলেরা মিলে ঠিক করলাম যে আজকের রাত টা এমন কিছু করা হবে যেন এটা সবার কাছে একটা ভালো স্মৃতি হিসেবে থাকে। সব ব্যবস্থা করা হলো আর এক এক করে সবাই আবিরের বাড়ি ও চলে এলো, আমি আর সাগ্নিক আগেই এসে পড়েছিলাম সব কিছু রেডি করার জন্য। এরই মধ্যে আমি সাগ্নিক আর সর্ব মদ কিনতে বেরোলাম আর ঠিক তখনই দিশার ফোন এলো। দিশার ফোন টা তুলতেই শুনি যে ও কাঁদো কাঁদো গলায় আমায় বললো যে আমি যেন পার্ক স্ট্রিটে এসে ওকে নিয়ে যাই, আর ঠিক তারপরই ফোন টা কেটে গেলো, আমি কিছু জিজ্ঞাসা করার সুযোগ ও পেলামনা ওকে। ওকে আবার ট্রাই করতে লাগলাম কিন্তু বারবার ফোন টা নেটওয়ার্ক কাভারেজ এর বাইরের মেসেজ আসছিলো। আমি আর দেরি না করে ওর বয়ফ্রেইন্ড বিবেক কে কল করলাম, আমি জানতাম যে দুজনেই আজ পরীক্ষার পর একসাথে ঘুরতে গিয়েছিলো, ওকে ফোন করলাম তো দেখি ও রিসিভ করলোনা। আমি আর বেশি না ভেবে রিমা কে কল করলাম আর ওকে পুরো ব্যাপার টা বললাম আর ওকে দিশা কে কল করতে বললাম। কিছুক্ষন পরে রিমা আমায় ফোন করে বললো," দিশা ফোন তুলছে না, তুই দেরি না করে ওকে আন্তে চলে যা ", আমিও আর বেশি না ভেবে সর্ব 'র হাতে ব্যাগ টা দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
পার্ক স্ট্রিটে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেশ দেরিই হয়ে গেলো, রাস্তায় ওকে ফোনে ট্রাই করে যাচ্ছিলাম কিন্তু সেখানেও কিছু উত্তর আসছিলোনা, টেনশন হতে লাগছিলো এবার আবার তার মধ্যে জানিনা যে পার্ক স্ট্রিটে গিয়ে কোথায় খুঁজবো। বাস থেকে নেমে রাস্তার লোকেদের ওর ফটো দেখতে লাগলাম, কেউই কিছু বলতে পড়ছিলো না, ২০ মিনিট খোঁজার পর শেষে মেট্রোর সামনে একটা সিগ্গারেট এর দোকান থেকে একটা সিগ্গারেট নিয়ে জ্বালাতেই দেখি একটা মেয়ে মেট্রোর সিডির ওপরে বসে আছে। সামনে যেতেই দেখি দিশা। ওর মুখের ওই অবস্থা দেখে আমার রাগ হচ্ছিলো নাকি কষ্ট হচ্ছিলো আমি নিজেও বুঝতে পারলাম না। ওকে নিয়ে উঠে এসে ওকেও একটা সিগ্গারেট কিনে দিয়ে টারপর দুজন মিলে মেট্রোর সামনে দাঁড়িয়ে, তখন দেখি হটাৎ কি একটা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললো আর আমায় জড়িয়ে ফেললো। ওর ওই অবস্থা দেখা ওকে যে কি ভাবে সামলাবো আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
আমি আর বেশি কিছু না ভাবে ওকে নিয়ে মোর অব্দি এসে একটা ট্যাক্সিতে উঠে আবিরের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। ট্যাক্সিতে উঠেই দিশা দেখি আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। আমিও ওকে র বিরক্ত করতে চাইছিলাম না কারণ জানি যে এখন ও ওই অবস্থায় নেই যে আমায় কিছু বলতে পারবে, কিন্তু ঠিক তখনই দিশার মা ওকে ফোন করলো আর ও ফোন রিসিভ করে ওর মায়ের সাথে ঝগড়া করতে লাগলো, আমি তৎক্ষণাৎ ওর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে ওর মাকে বুঝিয়ে বললাম যে ও আমাদের সাথে আবিরের বাড়িতে আছে আর আজ এখনই রাতে থাকবে আর আরো অনেক কিছুই বানিয়ে বললাম। আমরা দুজন আবিরের বাড়িতে পৌঁছাতেই সবার তো ওকে দেখে হাজার একটা প্রশ্ন জেগে উঠলো, আমি সবাইকে থামিয়ে রিমাকে আর সোহিনী কে ওকে ঘরে নিয়ে যেতে বললাম। ওরা দিশাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে চেঞ্জ করিয়ে ওকে শুয়ে দিলো। এসব হয়ে যাওয়ার পর আমরা সবাই আবিরের বাড়ির ছাদে গিয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম আর আমি সবে চাঁদের এক খোনাই এসে সিগারেট টা ধরাতেই দেখি দিশা নিচে থেকে এক এক ছাদে উঠে এসেছে আর এসে সিধে আমার আমার হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে নিজে সেটাই তন্ দিয়ে বললো "তুই সিগারেট খাস না, তুই ভালো!!" ব্যাস এই বলে দেখি আমার মাথা ঘুরে ও বসে পড়লো, এসিসব দেখে আমি ভাবলাম যে ওকে নিচে একা রেখে ভালো হবে না তার থেকে ও আমাদের সাথে এখানে ছাদেই থাকুক তাতে সবার সাথে থাকলে ওঁরও ভালো লাগবে। ওকে বসিয়ে আমাদের রাতের আসল পার্টির শুভারম্ভ করার পালা এলো , আমি মোদের বোতল টা খুলতেই সবাই যেন সেই হরির লুটের বাতাসের নেওয়ার মতো করে আমার দিকে এগিয়ে এলো।
পার্টি বেশ ভালোই চলছিল, অনেকজন এতক্ষণে মদের নেশায় বেহুঁশে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি রিমা, সর্ব, আবির আর সোহিনী তখনও জেগেই ছিলাম আর আমরা নিজেদের আড্ডা মারছি ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, আর ঠিক তখনই দেখি দিশা আমার সামনে এসে আমার হাত থেকে মদের গ্লাস টা নিয়ে একটা খালি গ্লাসের মধ্যে সেটা ঢেলে নিজে সেই মদ টা খেলো আর একটুখানি আমায় খাবার জন্য বললো, আমিও আর বেশি কিছু না বলে খেয়ে নিলাম তারপর ও আমার হাত টা ধরে আমায় ছাদের এক কোনায় নিয়ে গিয়ে হালকা কাঁদতে কাঁদতে আমায় জড়িয়ে কিস করলো। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না যে আমি কি করবো তখন ওই অবস্থায় ওকে আটকানোর কথা ভাবলাম কিন্তু আবার যেটা হচ্ছিল সেটাও চাইছিলাম যেন হয়ে যাক কারণ মনে মনে দিশা কে আমি খুব ভালোই বাসতাম কিন্তু তাও একটা যেন অপ্রস্তুত অবস্থায় পরে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষন পর ওঁর ঠোঁট টা আমার ঠোঁট তাকে ছাড়তেই ও আবার আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো " আমি তোকে খুব ভালোবাসি প্রবাহ, কিন্তু কোনো জানি না ভিভেক কে নিজের বয়ফ্রেইন্ড বানিয়ে ফেললাম, খুব বোরো ভুল করেছিলাম আমি এটা জীবনে "।
এটা দেখে আমাদের সবারই যেন নেশা নেমে গেলো আর আমি লক্ষ্য করলাম যে কেউই বেশি কিছু না বলে যে যার মতো নিচে শুতে চলে গেলো। পরের দিন সকাল হতেই আমি রিমা আর দিশাকে ওদের বাড়িতে ছেড়ে নিজে বাড়ি চলে গেলাম। আমি বাড়ি যাওয়ার সময় একটাই কথা ভেবে যাচ্ছিলাম যে আমায় নিশ্চই কেউ ভুল ভাববেনা কারণ সবাই আমার অবস্থাটা জন্যই আর ওখানে আসলে কি হয়েছিলো সেটাও সবাই জানে।
সেমেস্টার এর ছুটি শেষ হলো, কলেজে গেলাম, গিয়ে দেখি আমার সাথে কেউ বেশি কোনো কথা বলছেন, নিজের বন্ধুরা হোক বা সিনিয়র রা বা জুনিয়র রা কেউই না, আমি বাইরে চায়ের দোকানে যেতেই আমায় সূর্য দা বললো যে " কিরে ভালোই তো বাজি টা খেলি সেই রাতে, পেতে পেতে এতো, জানতাম না তো !" আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না আর ওকে জিজ্ঞাস করতেই ও পালিয়ে গেলো। তখন চায়ের দোকানের দাদা টা আমায় বললো যে সেদিন রাতে আমার আর দিশার মধ্যে যা হয়েছিল সেটা পুরো কলেজে জেনে গেছে আর সবাই আমায় সেটার জন্য দোষী মনে করছে আর সবাই রিমাকেও দোষী মনে করছে। এবার আমি বুঝলাম যে কেনো রিমা আমাকে এই একটা মাস ধরে কোনও কল বা আমার সাথে দেখা করেনি। এখানে বলে রাখি শেষ এক মাসে আমাদের তিনজনের একসাথে দেখা হয়নি কিন্তু আমার আর দিশার মধ্যে ব্যাপারটা আরো গভীরের দিকেই এগোচ্ছিল, আর কেনো জানিনা আমার মনে হতো যে ও আমার আরো কাছে আস্তে চাইছিলো। ওসব না ভাবে আমি ক্লাসে গেলাম , জানতামই যে সবার থেকে কেমন ব্যবহার পাবো তাই আর ওসব মাথায় ও আন্তে চাইনি। কিছুক্ষন পরে দেখি রিমা আর দিশা একসাথেই ক্লাসে ঢুকলো আর দুজনেই এসে আমার দু'পাশে এসে বসলো, এটা দেখে আমি একদিকে খুশি হলাম যে আমার বন্ধুরা আমার সাথে সবসময় আছে আর আমিও তাদেরই সাথে।
কিছু দিন খুব ভালোই যাচ্ছিলো, দিশা আমার সাথে একা একটু বেশিই সময় কাটাচ্ছিল, সবই ভালো যাচ্ছিলো তো এরই মধ্যে আমায় দিশাকে একদিন প্রিন্সেপঘাট নিয়ে যাওয়ার কথা বললাম তো তখন ও আমায় একটু গরম দেখিয়েই মানা করে দিলো। কিছু দিন পরে আবার ঘুরতে যাওয়ার কথা বললাম তো আবার বললো শরীর ভালো নেই বলে আবার আমার কথা তাকে কাটিয়ে দিলো।
আর ঠিক দুদিন পরেই দেখি ইনস্টাগ্রামে নিজের কিছু ছবি আপলোড করেছে আর ব্যাকগ্রউন্ডে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিলো যে ওটা প্রিন্সেপঘাট এরই মনুমেন্ট টা, আর তার ওপরে ক্রেডিট তাও দিয়েছিলো দেবাশীষ কে, দেবাশীষ হলো ভিভেক এর সব থেকে ভালো বন্ধু আর দিশা আর ভিভেক এর ম্যাক্সিমাম ছবি ওই তুলতো আগে, তো আমি এসব নিয়ে অটো না ভাবে আমার ফিড তাকে ওপরেই স্ক্রল করলাম।
দুদিন পরে দেখি দিশা কলেজে এসে আমায় বলে " চল আজ আমরা প্রিন্সেপঘাট যাবো", আমি তো রাজিই ছিলাম। আমিও বললাম " হ্যাঁ চল ", কিন্তু ও আমায় একটা শর্ত দিলো যে আমি যেন রিমাকে না জানাই এটার ব্যাপারে। আমরা দুজন প্রিন্সেপঘাট গেলাম, গিয়ে ব্যাটিং করছিলাম আর তারপর বোট টা মাঝ গঙ্গাতে যেতে আমরাও অন্যদের মতো নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। কিছু দিন পর হটাৎ দিশাকে দেখি কলেজে একটা মেয়ের সাথে বিশাল ঝগড়া করছিলো, দূর থেকে দেখে বুঝলাম ওটা প্রিয়া আমার ল্যাব পার্টনার, আমি ওখানে সঙ্গে সঙ্গে দিশাকে আটকালাম আর দেখি দিশা বারবার প্রিয়াকে একটাই কথা বলছিলো যে " ও যেন আমার থেকে দূরে থাকে ", আমি প্রিয়াকেও বুঝিয়ে ক্ষমা চেয়ে দিশাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
পরের দিন আমাদের ক্রিকেট ম্যাচ ছিল কলেজে , তো আমাদের ইলেকট্রনিক্স আর ইলেক্ট্রিক্যাল এর মধ্যে ম্যাচ ছিল, আমার টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে গেলাম, একটা উইকেট পড়তেই আমার ক্যাপ্টেন আমায় ব্যাট করতে পাঠিয়ে দিলো, সাধারণত আমি শেষে ব্যাট করতে নামি কিন্তু কোনো জানিনা আমায় আজ আগে নামিয়ে দিলো, আমিও খুশিই ছিলাম কারণ আমি জানতাম যে আজ দিশাও খেলা দেখতে এসেছিলো, আর আমিও সেই সুযোগে মাঠে নামার আগে ব্যাট টা নিয়ে নিজেকে বিরাট আর দিশাকে অনুষ্কা ভেবে মাঠে নামলাম, আর পরের ওভার এই দেখি বিবেকের হাতে বল। আমায় মনে মনে খুশি ছিলাম কারণ আমার কাছে এটা একটা সুযোগ ছিল দিশাকে আমার প্রতি আরো আকর্ষিত করার কিন্তু ভিভেককেও কম ভাবলে হবেনা, ও দারুন বোলার আর এমনকি দিশা বলতে গেলে বিবেকের এই ট্যালেন্ট দেখেই ওঁর প্রেমে পড়েছিল।
প্রথম বল করলো ভিভেক আর আমার কিছু বোঝার আগেই বল টা এসে ডাইরেক্ট আমার কপালে লাগলো আর আমার চশমাটা ছিটকে পরে গেলো আর ভেঙে গেলো, সবাই মাঠে চলে এলো আমাকে আমার চশমাটা খুঁজে দিতে, umpire আমায় retired hurt করে দিচ্ছিলো, ঠিক তখনই আমি ওই ভাঙা চশমাটা পরে ব্যাটটা নিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়লাম আর ক্রিসে দাঁড়ালাম পরবর্তী বল টা ফেস করতে। তারপর আবারো বল মিস করলাম, ৩র্ড বল টা ভিভেক ফুলটস দিতেই আমি সেটাকে সোজা বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিলাম, ব্যাস আমার ফর্ম ফায়ার এসেছিলো, ২০টা বল খেলে ৪৮* not out ছিলাম। পরের ওভার এর ফার্স্ট বল রাজ্ বল করতে এলো আর আমি সেটাকে হালকা ঠেলে দিয়ে প্রথম রান টা তাড়াতাড়ি নিয়ে আবার strike এ ফিরতে যাচ্ছিলাম আর ঠিক তখনই বলটা কথা থেকে এসে আমার পেতে লাগলো যেখানে আমার এপেন্ডিক্স এর অপারেশন হয়েছিল। আমি আর রঙটা পুরো না করতে পেরে মাঠেই শুয়ে পরে চটপট করতে লাগলাম বেথায়। যে ভাবে হোক দাঁড়িয়ে মাঠের বাইরে চলে যাচ্ছিলাম আর ঠিক তখনই ভিভেক আমাকে ইঙ্গিত করে বলে উঠলো " গান্ডু টাকে পেতে আরেকটু জোরে মারলে এখনই মোর যেত আর সব ঝামেলায় মিতে যেত ", এটা আমি শুনে আমি কেন কিছু না ভাবে হাতের ওই ব্যাটটা দিয়ে ডাইরেক্ট ওঁর পায়ে জোরে মারলাম।
ওটা দেখে আমার টীম এর আর ওঁর টীম এর সবাই মাঠে নেমে পড়লো, আমি ওকে খিস্তি করছি আর মেরো যাচ্ছি আর ও আমায় আমায় তাই , সাবাই মিলে এসে আমাদের কে আলাদা করে মাঠ থেকে বার করে দিলো। আমি বেরিয়ে এসে দিশা কে ফোন করলাম তো দেখি ও রিসিভ করলোনা, তারপরই রিমাকে ফোন করতেই রিমা বললো যে দিশা অনেক আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলো।
আমি আবার কলেজে গেলাম আর কমন রুম এর ভেতরে ঢুকতেই দেখি যে দিশা আর ভিভেক একে অপরকে কিস করছে, আমি এটা দেখেই চিল্লিয়ে উঠতেই আবির, রিমা আর রিমার বয়ফ্রেইন্ড কথা থেকে চলে এলো আর আমাকে যখন থেকে চলে যেতে বললো, আমি রিমার দিকে তাকিয়ে ওকে বললাম " রিমা তুই সব জেনেও আমায় কিছুই বললিনা? ", আমার কথা শুনে দিশা দেখি হটাৎ আবিরের এর দিকে তাকিয়ে বললো, " আবির ওই ছেলেটাকে বলে দে যে বন্ধুত্বের মধ্যে একটা বাউন্ডারি থাকে আর কেউ যদি তার সাথে দুটো ভালো ভাবে কথা বলে তার মানে এটা নয় যে ওঁর ফায়দা নেওয়া উচিত "। আমি এটা শুনে একবার খালি দিশার দিকে তাকিয়ে বললাম " মানে!! আমি তোর ফায়দা নিতে চেয়েছি, তোর।" আমি রিমার দিকে তাকিয়ে খালি একটু হাসলাম আর রিমার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পড়লাম যে ও এর ব্যাপারে কিছুই জানেনা।
ব্যাস ওই সেদিনই ছিল, আমি, দিশা আর রিমার সাথে শেষ বারের মতো কথা বলেছিলাম। ফাইনাল পরীক্ষার দিনেও কলেজে গিয়ে পরীক্ষা দিলাম আর বেরিয়ে আসার আগে ওদের দুজন কেই একবার দেখতে পড়লাম নিজের নিজের বয়ফ্রেইন্ড দেড় সাথে বেশ ভালো ভাবেই আছে। আমিও আর কারুর সাথেই দেখা না করে চুপ চাপ চায়ের দোকানে গিয়ে একটা সিগারেটে ধরালাম আর ওখানেও শুনতে পড়লাম দু তিনটে জুনিয়র আমার সি ঘটনাটা নিয়েই কথা বলছিলো। ব্যাস ওই শেষ আমার কলেজের কিছু ভালো দিনের সময় একটা আচমকা বাজে ভাবে শেষ হয়ে যাওয়া। চারটে বছর অনেক জিনিসই ছেড়ে এগিয়ে গেছি কিন্তু এখনো কাউকে যখন দেখি তাদের কলেজের সময়ের কথা ভেবে খুশি হতে কোনো জানিনা সেটা আমার জন্য আর হয়না।
আমি এখনো জানিনা যে কোনো ওরা দুজন আমার সাথে ওরম ব্যবহার করলো,কেনই বা শেষ ১০ বছর ধরে আমার সাথে একবারের জন্যেও যোগাযোগ করলোনা, ওরা দুজনেই আমায় সেই দিনের ঘটনার পর আমায় সব সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আমায় ব্লক করে দিয়েছিলো কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষার পর হটাৎ আমায় আনব্লক করে দিলো কিন্তু আমার মেসেজের কোনও উত্তরই দিতোনা, আমি কতবার ওদের মেসেজ করতাম, ওদের ছবি তে কমেন্ট করতাম, কিন্তু কোনোদিনও তার কোনও উত্তর এলোনা, খালি আমার জন্মদিনের দিনে দুজনেই আমায় Happy birthday র মেসেজ পাঠাতো আর তার উত্তর আমি দিলে আবার সেটা দেখে রেখে দিতো। রিমার বিয়ে হয়ে গেছে কিন্তু ওঁর সেই কলেজের বয়ফ্রেইন্ড তার সাথে না, ওঁর অফিস এর একজনের সাথে, দিশারও বিয়ে হয়েছিল বিবেকের সাথে কিন্তু ১ বছরের মধ্যে ওদের ডিভোর্স ও হয়ে গেলো আর এখন দিশা একটা কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে প্রোডাকশন হাউসে কাজ করে। ওদের ব্যাপারে এতো কিছু জানতে পারি কারণ ওডির ইম্পরট্যান্ট সব ছবিতেই ওরা আমি ট্যাগ করে আর সব থেকে কষ্ট পেয়েছিলাম যখন ওদের বিয়ের ছবিটা দেখেছিলাম আর তার মধ্যে আমাকে ছাড়া কলেজের সবাই ছিল, সেদিন কষ্টে প্রচুর কেঁদেছিলাম, অনেক প্ল্যান করেছিলাম যে ওদের বিয়েতে সব প্ল্যানিং আমি করবো, সব দায়িত্ব আমি নেবো, ওদের পিঁড়িতে তুলবো কিন্তু ওই এক মুহূর্তে যেন সব শেষ হয়ে গেলো আর ওরা পর হয়ে গেলো।
শে যাই হোক তাও মনে মনে খুব খুশি হয়েছিলাম যে ওরা সুখে আছে ভেবে।
অনেক কিছুই বলে ফেললাম, লিখতে লিখতে ভোর হয়ে গেলো, আর বেশি কিছু ভেবে নিজেকে বা ওদেরকে আর দোষী ভাবতে চাইছিলাম না, কারণ ১০ বছর হয়ে গেছে অলরেডি। খালি একটাই আক্ষেপ রয়ে গেলো যে ওরা আমার সাথে কেনো এরম একটা ব্যবহার করলো। আমাদের সম্পর্কটা এতটাও কমজোর ছিলোনা যে হুট্ করে এটা ভেঙে যেতে পারে কিন্তু কোনো জানিনা সেটাই শেষে হলো।
যাই হোক আমি ওদের আবারো ফোন করতে থাকবো, আর সোশ্যাল মিডিয়া তেওঁ ওদের বিরক্ত করতে থাকবো, আশা রাখি এই যে একদিন না একদিন ওই দিক থেকেও কোনও উত্তর আসবে ঠিকই । আমি ওদের দুজনের জন্য জন্য আমার মরার আগের অব্দি অপেক্ষা করতে পারি, কারণ আমি ওদের দুজনকেই আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি আর দিশাকে সত্যিই মন থেকে ভালোবাসতাম কিন্তু এই যে কোনোদিনও সেটা আর ওকে বলতে পারলামনা আর ও সেটা বুঝতে পারলোনা।
No comments:
Post a Comment