" আমরা যা ভাবি, যা বলি, আর যা করি " – PART 3
আজকে কলেজ যাওয়ার সময় দেখি এস্প্লানেড এর মোড়ে একটা NGO 'র সমাবেশ বেরিয়েছে , হাতে বোর্ড আর প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রচুর যুবক যুবতীরা রাস্তা দিয়ে হাটছে আর বলছে "রঙ বৈষম্য শেষ করো, মানুষ কে নিজের গুনের হিসেবে দেখা হোক নাকি তাদের রূপের ওপর।" এসব শুনতে শুনতে আমার মাথায় একটাই কথা এলো খালি যে রঙ বৈষমের সমাবেশ এ একটাও কোনো কালো মানুষ এর উপস্থিতি ছিলোনা, সে যাই হক আর কি।
এখানে বলে রাখি ওই যে "BLACK PEOPLE" বলা হয় তো আমিও একজন তাই এ আর আমিও ছোট থেকেই এই জিনিস তা নিয়ে অনেক কিছু শুনেছি সেটা বন্ধুদের থেকেও হোক কি নিজের টিচার দেড় থেকেই হোক।
কলেজে প্লেসমেন্ট সেসন চালু হলো আর আমিও বাকি স্টুডেন্টস দের মতো লেগে পড়লাম ওই রেস এ , একটা কোম্পানির ইন্টারভিউ তে আমি আর আমার সাথে আরো ৪ জন ফাইনাল রাউন্ড অব্দি পৌছালাম। ইন্টারভিউ দিতে আমরা সবাই এক সাথেই ঢুকলাম , আমি বাঁদিক থেকে বসলাম আর আমার পাশেই এক এক করে সবাই বসলো, এখানে বলে রাখি ইন্টারভিউ নিতে তিনজন এসেছিলো। আমাদের ইন্টারভিউ চালু হলো, ফার্স্ট এ ম্যাডাম টি আমায় একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো তার উত্তর আমি দিলাম, এবার এরম ভাবে আমাদের সবাইকেই এক এক করে প্রশ্ন করা হলো আর আমরাও বেশ ভালো ভাবেই তার উত্তর দিয়ে গেলাম।
ইন্টারভিউ এর রাউন্ড শেষ হতেই আমরা রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম, কিছুক্ষন পর রেজাল্ট বেরোলো আর তাতে দেখলাম যে আমার নাম খালি ছিল না, খুবই খারাপ লাগলো কিন্তু তারপর মনে হলো যে নিশ্চই ওরা আমার থেকে ভালো তাই ওরা চাকরি তা পেলো। হালকা দুঃখী ছিলাম আমি, বাইরে গিয়ে সিগারেট খাচ্ছিলাম কি তখনই দেখি যারা আমার ইন্টারভিউ নিচ্ছিলো তারাও এসে ওই দোকানেই দাঁড়ালো, আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম, হটাৎ শুনি কি তারা আজকের ইন্টারভিউ তে একটা ক্যান্ডিডেট এর ব্যাপারেই কথা বলছিলো, আমার একটু কৌতূহল হলো তো গিয়ে দেখি কি তারা একটা ছেলের ব্যাপারেই কথা বলছিলো আর বার বার খালি কথার মাঝখানে বলছিলো যে "কালো ছেলে তা ভালো ছিল কিন্তু কিছু কারণের জন্য তাকে নেওয়া গেলো না" এবার আমি এটা শুনে একটু চমকে গেলাম যে এরম ভাবে কার কোথায় বা বলছে তারা, ঠিক তখনই মনে হলো যে তারা যেই কালো ছেলেটার কথা বলছে সেটা আমি ই নইতো?
আমার তাদের সাথে কথা বলতে একটু দ্বিধাবোধ হচ্ছিলো তাই কলেজের একটা স্যার কে বললাম আমার ব্যাপারে একটু জ্গাস করতে তাদের, তো স্যার গিয়ে তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারলো যে আমি নাকি ইন্টারভিউ তে খুব ভালো পারফর্ম করেছি কিন্তু তারা আমাকে নেয়নি তার একটাই কারণ আছে আর সেটা হলো আমার গায়ের রং। তারা আরো বলে যে আমি নাকি অপরিষ্কার তাই ওরা আমায় নেই নি। আমি এই কথা গুলো শুনে আর কিছু না বলে বাইরে গিয়ে আরেকটা সিগারেট খেয়ে বাড়ির জন্য রওনা দিলাম।
বাড়ির যাওয়ার পথে এস্প্লানেড এর মোড়ে দেখি কি সকালের রঙ বৈষমের যে সমাবেশ তা হয়েছিলো সেটার ই প্ল্যাকার্ড গুলো রাস্তায় পরে আছে আর তারপর জল পরে সেগুলো পুরো বাজে অবস্থায় হয়ে আছে। আমি এগুলো দেখলাম দেখছিলাম র নিজেই মনে মনে হাসছিলাম যে আমরা মানুষেরা যতই না মুখে বড়ো বড়ো কথা বলে থাকি কিন্তু কাজের সময় আমরা যেমন আর এমডির ভেতরের গুন্ বা শিক্ষা যেমন আমরা তেমন ই কাজ করে থাকি। আমরা মানুষকে নিশ্চই শুধরাতে পারিনা কিন্তু তাদের ভেতরের চিন্তা ভাবনা তাকে তো ঠিক করতে পারি, এবার ব্যাপার তা হলো যে সেটা কতটা হতে পরে।
এই জিনিস তা নিয়ে আমি লিখলাম কারণ এটা আমি আমার জীবনে প্রচুর বার আমি অনুভব করেছি কিন্তু কেন জানিনা এতো বছর হয়ে গেলো এতো নতুন লোকেদের সাথে দেখা করলাম, অনেক স্তরের লোকের সাথে মিসলাম, কেন জানিনা মনে হলো দিনের শেষে সবাই ই এক আর সবার মেন্টালিটি ই এক।
- Prodipto Das
No comments:
Post a Comment